-- বিজ্ঞাপন ---

স্পেস এলিভেটর থেকে লুনার ভিলেজ,কোথায় দাঁড়িয়ে মানবজাতির ভবিষ্যৎ স্বপ্ন?

সিরাজুর রহমান#

অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় বা ম্যাগাজিনে মহাকাশ গবেষণা ও উন্নয়ন নিয়ে এমন সব খবর প্রকাশ হয়, যেগুলো বাস্তবে এখনও কেবল তাত্ত্বিক ধারণা বা সাইফাই মুভির কল্পনা হিসেবে রয়ে গেছে। তবে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং নিরলস গবেষণায় মানবজাতি আজ অভাবনীয় প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধন করেছেন এবং ভবিষ্যতেও তা চলমান থাকবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া এবং গ্রুপে প্রচার করা হয়েছে যে, জাপান নাকি আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে মহাকাশ পর্যন্ত প্রায় ৯৬,০০০ কিলোমিটার লম্বা একটি বিশাল স্পেস এলিভেটর তৈরি করবে বলে প্রচারিত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে ৯৬ হাজার কিলোমিটার আকারের একটি কার্বন ন্যানোটিউব (CNT) কেবল দিয়ে মহাকাশ লিফট নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এটি পৃথিবী থেকে শুরু করে জিওস্টেশনারি কক্ষপথ পর্যন্ত চলে যাবে। যা মানবজাতির বর্তমান প্রযুক্তিগত সক্ষমতার বিচারে একেবারেই একটি অবাস্তব পরিকল্পনা বলা চলে। তাছাড়া এই বিষয়ে কিন্তু জাপানের কোনো সরকারি সংস্থা বা শীর্ষ সংবাদমাধ্যম এখনো নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রকাশ করেনি। বাস্তবে এ প্রকল্পের কাজ আদৌ কবে শুরু হবে, সে নিয়েও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ঠিক একইভাবে ২০০০ সালের দিকে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ঘোষণা করেছিল যে, তারা ২০১৩-১৫ সালের মধ্যে চাঁদের বুকে একটি “লুনার ভিলেজ” তৈরি করবে। যেখানে বিজ্ঞানী ও পর্যটকরা থাকতে পারবেন। অথচ এত বছর পরও সেই প্রকল্পের অগ্রগতি বলতে গেলে ০%। এর পাশাপাশি মার্কিন বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেস-এক্স আগামী ২০৫০ সালের মধ্যেই চাঁদের বুকে এবং মঙ্গলগ্রহে মহাকাশচারী পাঠানোর উপযোগী স্পেসক্রাফট ডিজাইন ও তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। এই মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা ইতোমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় রকেটের বেশকিছু সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে।

তবে প্রকাশ থাকে যে, অসীম মহাকাশে রোবট পাঠানো আর সশরীরে মহাকাশচারী পাঠানো মোটেও একই কথা নয়। আর অসীম মহাকাশে বছর ব্যাপী নভোচারী টিকে থাকার উপযোগী স্পেসক্রাফট ডিজাইন ও তৈরি করা নিয়ে আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, জাপানের মতো দেশগুলো বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পাশাপাশি নিবিড়ভাবে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই মানবজাতির মহাকাশ গবেষণার এহেন প্রচেষ্টাকে কোনভাবেই তুচ্ছজ্ঞান কিংবা উপহাস করার সুযোগ নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন তার আপন গতিতে ধারাবাহিকভাবেই এগিয়ে যাবে। যদিও বর্তমানে মহাকাশ গবেষণা ও উন্নয়ন নিয়ে অনেক বড় বড় পরিকল্পনা ও মেগা প্রজেক্টের কথা শোনা গেলেও, সেগুলো বাস্তবে রূপ দিতে মানবজাতিকে এখনো কয়েক শতাব্দী হয়ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, মহাকাশ গবেষণার প্রতিটি পদক্ষেপ মানবজাতির অগ্রগতির এক অনন্য প্রতীক হিসেবে টিকে রয়েছে। এটি শুধু প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা নয়, বরং তা হবে মানবিক কল্পনা, সাহস, এবং সীমাহীন সম্ভাবনার জয়গাথা। আজ যে ধারণা কেবল কল্পনায় সীমাবদ্ধ, তা-ই হয়ত একদিন বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমাদের ভবিষ্যতের ইতিহাস রচনা করবে।##