-- বিজ্ঞাপন ---

শক্তিশালী সুপারকন্ডাক্টিং চৌম্বকক্ষেত্রের বিশ্বরেকর্ড গড়েছে চীন!

সিরাজুর রহমান#

সম্প্রতি চীনের হেফেই ইনস্টিটিউট অব প্লাজমা ফিজিক্স (ASIPP)-এর বিজ্ঞানীরা একটি যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছেন। তারা সম্পূর্ণভাবে সুপারকন্ডাক্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৩৫.১ টেসলা (৩,৫১,০০০ গাউস) শক্তির একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও স্থিতিশীল চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি করতে সক্ষম হন। এই চৌম্বকক্ষেত্রটি একটানা ৩০ মিনিট ধরে স্থিতিশীলভাবে কাজ করে এবং বিজ্ঞানীরা এটিকে প্রয়োজন শেষে একেবারে নিরাপদে বন্ধ করতে সক্ষম হন। বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী, পৃথিবীর প্রাকৃতিক চৌম্বকক্ষেত্র ক্ষেত্রের শক্তির পরিমাণ প্রায় ০.৫ গাউস, সেখানে চীনের গবেষণাগারে তৈরি চৌম্বকক্ষেত্রের শক্তির পরিমাণ হচ্ছে অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় ৩,৫১,০০০ গাউস বা ৩৫.১ টেসলা। যা কিনা পৃথিবীর প্রাকৃতিক চৌম্বকক্ষেত্রের চেয়ে প্রায় ৭.০২ লক্ষ গুণ বেশি বলে দাবি করা হয়েছে। যাকে একটি নতুন বিশ্বরেকর্ড হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর গাউস হলো চৌম্বকক্ষেত্রের একটি পরিমাপের একক।
এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হাই ম্যাগনেটিক ফিল্ড ল্যাবরেটরি (ন্যাশনাল ম্যাগল্যাব) চৌম্বকক্ষেত্রের এক শক্তিশালী ৩,২৩,৫০০ গাউস রেকর্ড গড়ে। তবে চীনের নতুন এই রেকর্ডটি গড়তে গবেষকদলটি উচ্চ-তাপমাত্রার সুপারকন্ডাক্টিং ইনসার্ট-কয়েল এবং নিম্ন-তাপমাত্রার সুপারকন্ডাক্টিং কয়েলের মধ্যে থাকা প্রযুক্তিগত জটিলতাগুলো অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অতিক্রম করতে সক্ষম হন। চীনের শক্তিশালী এই চৌম্বকক্ষেত্র প্রজেক্টের মূল পরিকল্পনার নেতৃত্ব দিচ্ছে হফেইভিত্তিক চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অব প্লাজমা ফিজিক্স (এএসআইপিপি)। তাছাড়া এই প্রজেক্টে সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে চীনের হফেই ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপ্লাইড সুপারকন্ডাক্টিভিটি সেন্টার, হফেই কম্প্রিহেনসিভ ন্যাশনাল সায়েন্স সেন্টারের এনার্জি ইনস্টিটিউট এবং চীনের বিখ্যাত সিংহুয়া ইউনিভার্সিটি।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি করা শুধু একটি রেকর্ড নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের নানা ধরনের উচ্চ-প্রযুক্তির ডিভাইস বা সিস্টেমের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এটি নিউক্লিয়ার ফিউশন রিয়্যাক্টর এর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যেখানে এই চৌম্বকক্ষেত্র সূর্যের মতো অতি উচ্চ-তাপমাত্রার প্লাজমাকে একটি চৌম্বকীয় বলয়ের মধ্যে আটকে রাখতে সক্ষম হবে। এছাড়াও, এই প্রযুক্তি ম্যাগলেভ ট্রেন, নতুন প্রজন্মের মহাকাশযানের বৈদ্যুতিক প্রপালশন সিস্টেম, আরও দক্ষ বিদ্যুৎ পরিবহন ব্যবস্থা এবং বিশেষ করে নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স (NMR) স্পেকট্রোসকপির সক্ষমতা বাড়িয়ে নতুন ওষুধ আবিষ্কার এবং জটিল রাসায়নিক যৌগের গঠন বুঝতে বিপ্লব ঘটাতে পারে। এছাড়া, এটি কণা ত্বরকযন্ত্র (Particle Accelerator)-এর কার্যকারিতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।
পরিশেষে বলা যায়, উন্নত বিশ্বের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোর গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক প্রকল্পগুলোও শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রে তৈরিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া এই প্রযুক্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে আগ্রগামী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হাই ম্যাগনেটিক ফিল্ড ল্যাবরেটরি (ন্যাশনাল ম্যাগল্যাব) শীর্ষস্থানে রয়েছে।## তথ্যসূত্র: সিএমজি বাংলা, উইকিপিডিয়া, সিজিটিএন, Xinhua News Agency