-- বিজ্ঞাপন ---

এআই নির্ভর এক্সাস্কেল সুপার কম্পিউটার তৈরির পথে ‘গুগল’!

সিরাজুর রহমান#

বর্তমানে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে নতুন প্রজন্মের এবং উচ্চ প্রযুক্তির সুপার কম্পিউটার তৈরির এক তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক জায়ান্ট গুগল গোপনে একটি অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ভিত্তিক এক্সাস্কেল সুপারকম্পিউটিং সিস্টেম তৈরি করেছে। উচ্চস্তরের গবেষণা এবং ভবিষ্যতের প্রযুক্তিতে নিজেদের নেতৃত্ব বজায় রাখতেই গুগল এই প্রজেক্টে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
আসলে একটি এক্সাস্কেল সুপারকম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে কমপক্ষে এক কুইন্টিলিয়ন (১,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০) বা এক লক্ষ কোটি গণনা করতে সক্ষম। এটি প্রচলিত সুপারকম্পিউটারের চেয়ে হাজার গুণ বেশি দ্রুত ডেটা বিশ্লেষণ ও জটিল বৈজ্ঞানিক সমস্যার সমাধান করতে পারে। বিশেষ করে এই ধরনের শক্তিশালী সিস্টেম পারমাণবিক গবেষণা, জলবায়ু পরিবর্তন, মহাকাশ বিজ্ঞান এবং জটিল রোগের ওষুধ তৈরির গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
বর্তমানে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং জটিল প্রযুক্তির সুপার কম্পিউটার সিস্টেম উচ্চস্তরের গবেষণায় ব্যবহার করা হলেও, বাস্তবে এর পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রদর্শনের একটি নতুন মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম সুপারকম্পিউটারের তালিকায় নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিতে আমেরিকার পাশাপাশি জাপান, চীন এবং ফ্রান্সের মতো দেশগুলোর মধ্যে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা।
TOP500.org-এর জুন ২০২৫-এর তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকার “El Capitan” সুপারকম্পিউটিং সিস্টেম বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, যার গতি অবিশ্বাস্যভাবে প্রতি সেকেন্ডে ২.৭৪৬ এক্সাফ্লপস (Rpeak)। এটি চালাতে প্রায় ২৯.৫৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। এর আগে, ২০২২ সালে Hewlett Packard Enterprise (HPE)-এর তৈরি “Frontier” অ্যাডভান্স কম্পিউটিং সিস্টেমটি প্রথম এক্সাস্কেল সুপারকম্পিউটার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। এর গতি ছিল ২.০৬ এক্সাফ্লপস।
এখানে FLOPS (Floating Point Operations Per Second) হলো একটি পরিমাপক, যা দিয়ে একটি কম্পিউটারের গাণিতিক গণনা করার গতি বোঝানো হয়। ফ্লোটিং-পয়েন্ট সংখ্যা হলো দশমিকযুক্ত সংখ্যা। বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও এআই-এর মতো জটিল কাজে এই ধরনের গণনা খু্বই গুরুত্বপূর্ণ এবং বেশি প্রয়োজন বলে মনে করা হয়।
গুগল এখনো তাদের এই সুপারকম্পিউটারের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি। তবে এটি তাদের নিজস্ব এআই মডেল, বিশেষ করে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (LLMs), যেমন Gemini-কে প্রশিক্ষণের জন্য ডিজাইন ও তৈরি করা হচ্ছে। গুগলের প্রযুক্তিবিদদের মতে, এই সুপারকম্পিউটারের সক্ষমতা বর্তমান এক্সাস্কেল সুপারকম্পিউটারগুলোর সমান বা তার চেয়েও হয়ত বেশি হতে পারে।
এই সিস্টেম তৈরির মূল উদ্দেশ্য হলো গুগলের নিজস্ব এআই মডেলকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করা। এটি গুগলের নিজস্ব ডেটাসেন্টারগুলোতে স্থাপিত হবে এবং এটি চালু হওয়ার পর গুগলের এআই গবেষণা ও অন্যান্য ভার্চুয়াল প্রযুক্তির উন্নয়নে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হয়।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, গুললের নতুন প্রজন্মের এই এক্সা-স্কেলের সুপার কম্পিউটিং সিস্টেমটি কাজ খুব সম্ভবত আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হতে পারে। বৈশ্বিক প্রযুক্তির জগতে নিজস্ব আধিপত্য বজায় রাখতে গুগল এই প্রজেক্টটি নিয়ে অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রেখে চলছে। এতে গুগলের নিজস্ব উদ্ভাবিত TPU (Tensor Processing Unit) ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে, যা এআই কাজের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
এদিকে গুগল যখন তার এআই সুপারকম্পিউটার নিয়ে কাজ করছে, তখন চীন এবং অন্যান্য দেশও এই প্রতিযোগিতায় কিন্তু মোটেও পিছিয়ে নেই। বরং দীর্ঘদিন ধরেই সুপারকম্পিউটিং-এর ক্ষেত্রে চীন ও জাপান শীর্ষ স্থানে রয়েছে এবং তাদের একাধিক সুপারকম্পিউটার TOP500 তালিকায় প্রথম সারির স্থান দখল করে রেখেছে। চীন বর্তমানে তাদের নিজস্ব এআই মডেল এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এক্সাস্কেল সুপারকম্পিউটার তৈরির ক্ষেত্রে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নও (EuroHPC JU) প্রোগ্রামের মাধ্যমে একাধিক এক্সাস্কেল সুপারকম্পিউটার তৈরি করছে। যার মধ্যে একটি হলো ইউরোপের প্রথম এক্সাস্কেল সিস্টেম “Jupiter”। পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বের এই প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে বিজ্ঞান, গবেষণা, প্রযুক্তি এবং সামরিক সক্ষমতায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের এক প্রবল প্রতিযোগিতা চলছে। অদুর ভবিষ্যতে (এক সামরিক ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা ব্যতীত) যার মূল সুবিধাভোগী হবে সারা বিশ্বের ৮২০ কোটি মানুষ এবং ভবিষ্যতে এটি ভবিষ্যতে হয়ত বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।##তথ্যসূত্র: TOP500.org, Google AI Blog, Ars Technica, Wired Magazine